এনএনবি : ফ্রান্সে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে ক্ষোভের কারণে ৫৩ শতাংশ মানুষ যখন সকারের পতন চাইছে, ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ে বিশেষ ক্ষমতাবলে পার্লামেন্টে এমপি’দের ভোট ছাড়াই পাস করিয়ে নিয়েছেন তার বাজেট বিল।
এর মধ্য দিয়ে বার্নিয়ে তার সরকারের অনাস্থা ভোটের মুখে পড়ারই ঝুঁকি নিয়েছেন। বিবিসি লিখেছে, বিরোধীদলগুলো এখন সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আনতে উদ্যত হবে। আর তা হতে পারে বুধবার নাগাদই।
অনাস্থা ভোট হলে বার্নিয়ের সংখ্য্লাঘু সরকারের তাতে টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ, পতন ঘটতে পারে সরকারের।
প্রস্তাবিত বাজেটের লক্ষ্য- ৬ হাজার কোটি ইউরো কর বাড়িয়ে এবং ব্যয় কাটছাঁট করে ফ্রান্সের বাড়তে থাকা সরকারি ঘাটতি কমানো। নভেম্বরে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৬৭ শতাংশ মানুষ এই বাজেটের বিরোধিতা করেছে।
এরপরও প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ে সোমবার ফ্রান্সের সংবিধানের ৪৯.৩ আর্টিকেল কাজে লাগিয়ে পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষে কোনও ভোটাভুটি ছাড়াই বিলটি পাস করিয়ে নিয়েছেন।
বামপন্থি বিরোধীদল এবং কট্টর ডান-পন্থি ন্যাশনাল র্যালি (আরএন) দলের বিরোধিতার মুখেও বার্নিয়ে এ পদক্ষেপ নেন। ফ্রান্সের কট্টর-বামপন্থি দল এলএফআই- এর নেত্রী বলেছেন, তার দল সোমবারেই আনুষ্ঠানিকভাবে অনাস্থা ভোট করার আবেদন জানাবে।
বাম-পন্থি জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি) এর কয়েকজন সদস্য ইতোমধ্যেই বলেছেন, তাদের দল বার্নিয়ের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। ওদিকে, আরএন এর রাজনীতিবিদ মারিন ল্য পেন বলেছেন, তার দলের পেনশনের দাবি পূরণ না হলে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উৎখাত করতে ভোট দেবেন।
গত সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সে প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়েকে সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ। ফ্রান্সের রিপাবলিকান পার্টির (এলআর) হয়ে রাজনীতি করেছেন বার্নিয়ে।
গত জুন ও জুলাইয়ে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত আগাম জাতীয় নির্বাচনে সরকার গঠনের জন্য কোনও দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে রাজনৈতিকভাবে বড় তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে পার্লামেন্টের জাতীয় পরিষদ। এই বিভক্তি এড়িয়ে টেকসই সরকার গঠনের চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছিল বার্নিয়েকে।
প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর পছন্দ ঘিরে অসন্তোষ দেখিয়েছিল বামপন্থি রাজনৈতিক জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি)। জুলাইয়ের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছিল দলটি।
তাদের অভিযোগ ছিল, নির্বাচনে এনএফপি ভাল করলেও ডানপন্থি একজনকে প্রধানমন্ত্রী করা হচ্ছে। তারা তখনই সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার সংকল্প নিয়েছিল। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, বার্নিয়েকে সরকার টিকিয়ে রাখতে কট্টর-ডান আরএন এর ওপর নির্ভর করতে হবে।
যুক্তরাজ্যে বিক্রি হওয়া ‘ইতালীয়’ টমেটো পিউরিতে চীনের বাধ্যতামূলক শ্রমের ছাপ
চীনের উৎপাদিত টমেটোর বেশির ভাগই আসে শিনজিয়াং থেকে। সেখানে উইঘুর ও অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘু মানুষকে জবরদস্তি কাজ করিয়ে টমেটো উৎপাদন করানো হয় বলে অভিযোগ আছে।
যুক্তরাজ্যে বিক্রি হওয়া ‘ইতালীয়’ টমেটো পিউরিতে চীনের বাধ্যতামূলক শ্রমের ছাপ
এনএনবি : যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি সুপারমার্কেটে বিক্রি হওয়া ‘ইতালীয়’ টমেটো পিউরি আদতে চীন থেকে আসা এবং তাতে চীনের বাধ্যতামূলক শ্রমের যোগসূত্র পাওয়া গেছে বিবিসি’র এক অনুসন্ধানে।
বলা হচ্ছে, এই ‘ইতালীয় টমেটো পিউরি’ যেসব টমেটো দিয়ে তৈরি, সেগুলো চীনের শিনজিয়াং অঞ্চল থেকে এসে থাকতে পারে- যেখানে বাধ্যতামূলক শ্রম দিয়ে পণ্য উৎপাদনের অভিযোগ রয়েছে।
বিক্রি হওয়া কিছু টমেটো পিউরির নাম পুরোপুরি ইতালীয় ভাষার। আবার অনেক টমেটো পিউরির বোতলে এমনও লেখা আছে যে, সেটি ‘ইতালিতে উৎপাদিত টমেটো দিয়ে তৈরি’।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের উদ্যোগে পরীক্ষা করা ১৭ টি পণ্যে চীনা টমেটো থাকার সম্ভাবনা দেখা গেছে। যেগুলোর বেশিরভাগই যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির নিজস্ব ব্র্যান্ডে বিক্রি হয়েছে। যদিও বোতলে লাগানো লেবেল থেকে মনে হয় সেগুলো ইতালি থেকে আসা।
চীনের উৎপাদিত টমেটোর বেশির ভাগই আসে শিনজিয়াং থেকে। সেখানে উইঘুর এবং অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজনকে জবরদস্তি কাজ করতে বাধ্য করে এই টমেটো উৎপাদন করানো হয় বলে অভিযোগ করে আসছে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো।
জাতিসংঘও শিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ করেছে চীনের বিরুদ্ধে। নিরাপত্তায় ঝুঁকি মনে করে এই সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন চালায় চীন। জাতিসংঘ বলছে, শিনজিয়াংয়ে ১০ লাখ মুসলিমকে ক্যাম্পে আটকে রেখে কঠোর পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন রয়েছে।
তবে চীন এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলে আসছে, ওই ক্যাম্পগুলো উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। জাতিসংঘ প্রতিবেদন মিথ্যা এবং ভ্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে চীন।
বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ টমেটো উৎপাদন হয় চীনে। এর মধ্যে শিনজিয়াংয়ের আবহাওয়া এই সবজি উৎপাদনের জন্য বেশি উপযোগী। শিনজিয়াংয়ে উৎপাদিত টমেটো সাধারণত ইউরোপে পৌঁছায় ট্রেনে কাজাখস্তান, আজারবাইজান এবং জর্জিয়া হয়ে। এই চালান যায় ইতালিতে। শিপিং ডাটা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
বিবিসি’র এই বিশ্লেষণে ইতালির টমেটো-পক্রিয়াকরণ একটি কোম্পানির নাম বারবার উঠে এসেছে। সেটি হচ্ছে অ্যান্টোনিও পেটি। এই ইতালীয় কোম্পানি চীনের শিনজিয়াং অঞ্চলের টমেটোর প্রধান আমদানিকারক। ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে কোম্পানিটি ৩ কোটি ৬০ লাখ কেজির বেশি টমেটো আমদানি করেছে শিনজিয়াং গুয়ানং কোম্পানি থেকে।
বিবিসি’র গোপন এক অনুসন্ধানে পেটি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার একথা স্বীকারও করেছেন যে, তারা খরচ কমাতে চীনের টমেটো ব্যবহার করেন। ইতালির এই পেটি গ্রুপ টমেটোজাত পণ্য নিজেদের নামে তৈরি করে। আবার ইউরোপজুড়ে বিভিন্ন সুপারমার্কেটে তা সরবরাহও করে। যেখানে এই টমেটোজাত পণ্য সেখানকার নিজস্ব ব্র্যান্ডে বিক্রি হয়।
বিবিসি তাদের অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া ৬৪ টি ভিন্ন টমেটো পিউরির ল্যাব পরীক্ষা করেছে। এরপর চীন এবং ইতালি থেকে আনা নমুনার সঙ্গে সেগুলোর তুলনামূলক পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে ছিল শীর্ষ ইতালিয়ান ব্র্যান্ড এবং সুপারমার্কেটগুলোর নিজস্ব ব্র্যান্ডের টমেটো পিউরি। দেখা গেছে, সেগুলোর বেশির ভাগই ইতালির পেটি কোম্পানির তৈরি টমেটো পিউরি।